অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবসও। এই একটি দিবস ঘিরে গত দুই দিনে রবিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) ও সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুই কোটি টাকার গোলাপ বিক্রি করেছেন চাষিরা।
বসন্ত উৎসব ও ভালোবাসা দিবসে রেকর্ড পরিমাণ ফুল বিক্রি করতে পেরে বেশ খুশি গদখালীর চাষিরা। তারা বলছেন, আশানুরূপ ফুল বিক্রি হয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে গতবারের তুলনায় এবার দ্বিগুণের বেশি ফুল বিক্রি হয়েছে। দামও পেয়েছেন ভালো।
ফুল ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভালোবাসা দিবস ঘিরে রবিবার ও সোমবার দুই কোটি টাকার শুধু গোলাপ বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি অন্য ফুলও বিক্রি হয়েছে বেশ।
ঝিকরগাছার গদখালী এলাকার ফুল চাষি রনি আহমেদ বলেন, ‘করোনা মহামারির পরে বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসে রেকর্ড পরিমাণ ফুল বিক্রি হয়েছে। গত দুই দিনে দুই লাখ টাকার ফুল বিক্রি করেছি। দামও ভালো পেয়েছি।’
এবার খুব ভালো বেচাকেনা হয়েছে জানিয়ে পানিসারা এলাকার ফুল চাষি তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘ফুল তেমন একটা নষ্ট হয়নি। ১৪ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে মাঠ থেকে প্রায় এক লাখ টাকার ফুল বিক্রি করেছি। গোলাপ ও জারবেরা রয়েছে আমার ক্ষেতে। দুই বিঘা জমিতে চাষ করেছি এই দুই জাতের ফুল। ভালো দাম পেয়েছি এবার।’
বসন্ত উৎসব ও ভালোবাসা দিবসে গদখালী ও পানিসারা থেকে বিভিন্ন ফুল দেশের বিভিন্ন জেলায় যায়। ব্যবসায়ীরা এই দিবসকে সামনে রেখে মূলত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকেই ফুল সংগ্রহ করেন। কোনও রকম রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার ছাড়াই পাঁচ-সাত দিন গোলাপসহ অন্যান্য ফুল সতেজ রাখা সম্ভব। সে কারণে ব্যবসায়ীরা ১২-১৩ তারিখের আগেই চাহিদা অনুযায়ী ফুল সংগ্রহ করেছেন।
পানিসারা এলাকার ফুল ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি মাসের শুরু থেকেই এখানকার চাষিরা ফুলের দাম পেতে শুরু করেন। বসন্ত ও ভালোবাসা উৎসবে গোলাপ, গ্লাডিওলাস, জারবেরা, রজনীগন্ধা, গাঁদা ও জিপসির চাহিদা থাকে বেশি।’
রফিকুল ইসলাম পিরোজপুর, ঝালকাঠি, কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ জেলায় ফুল সরবরাহ করেন। চলতি বছর বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসে প্রায় পাঁচ লাখ টাকার ফুল বিক্রি করেছেন।
রফিকুল বলেন, ‘উৎসবের আগের দিন বা দুইদিন আগে নয় ফুল বিক্রি ৮ ফেব্রুয়ারি থেকেই শুরু হয়ে যায়। ব্যবসায়ীরা ফুল বিশেষ করে গোলাপ ৫ থেকে ৭ দিন টাটকা রাখতে পারেন। ভালোবাসা দিবসে গোলাপ সর্বোচ্চ ২০ টাকা, গ্লাডিওলাস ১৪ টাকা, জারবেরা ১২ টাকা, রজনীগন্ধা ১০ টাকা, এক হাজার গাঁদা ৪০০ টাকা, এবং জিপসি ৫০ টাকা আঁটি বিক্রি হয়েছে।’
সরাসরি বাজারে কিংবা আড়তে নয় অনলাইনেও ফুল বিক্রি করেছেন এ অঞ্চলের নতুন ব্যবসায়ী আল আমিন। জানুয়ারি মাসের তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে অনলাইনে একটু বেশি বিক্রি হয়েছে তার। আল আমিন বলেন, ‘ভালোবাসা দিবসে প্রায় ৮০ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করেছি। প্রতিদিন যে অর্ডার পাই সে অনুযায়ী পাঠিয়ে থাকি। জানুয়ারি মাসে সব খরচ বাদে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা মুনাফা হয়েছে। মধ্য ফেব্রুয়ারিতে প্রায় কাছাকাছি। এ মাসে ত্রিশ হাজার ছাড়াবে বলে মনে হচ্ছে।’
আল আমিন গ্রাহকের চাহিদার ফুল যাত্রীবাহী বাস বা ট্রাকে করে পাঠান। এক্ষেত্রে কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবহার করেন না। তবে ফুলের গাছ অথবা বীজ পাঠাতে কুরিয়ার সার্ভিসের ব্যবহার করেন।
২০২০ সালে তিনি অনলাইনে এ ব্যবসা শুরু করেন। প্রথম দিকে শুধু ফুলের বীজ ও ফুলের চারা পাঠাতেন। পরে যুক্ত হয় টাটকা ফুল।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার্স সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, ‘৭ ফেব্রুয়ারির পর থেকেই গোলাপের দাম ১০ টাকা থেকে বাড়তে শুরু করে। ৮ থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ২৫ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে। ভালোবাসা দিবসে গত দুই দিনে প্রায় দুই কোটি টাকার গোলাপ বিক্রি হয়েছে। এখনও গদখালী ও পানিসারার মাঠে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকার গোলাপ রয়েছে। একুশে ফেব্রুয়ারি নাগাদ এগুলোও বিক্রি হয়ে যাবে।’
স্থানীয় সূত্র জানায়, ঝিকরগাছার গদখালী ও পানিসারা ইউনিয়নের চাষিরা সারা বছরই ফুল চাষ করেন। তাদের উৎপাদিত রজনীগন্ধা, গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা, গ্লাডিওলাস, জিপসি, রডস্টিক, কেলেনডোলা, চন্দ্রমল্লিকাসহ ১১ ধরনের ফুল সারা দেশের বিভিন্ন আয়োজনের অনুষঙ্গ হয়।
বিশেষ করে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস, বিজয় দিবস, খ্রিষ্টীয় নববর্ষ, বসন্ত উৎসব, ভালোবাসা দিবস, স্বাধীনতা দিবস ও পহেলা বৈশাখে ফুলের বিকল্প নেই। ২১ ফেব্রুয়ারিতে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয় ফুল দিয়ে। তাই এসব দিবসে ফুল বেচাকেনা হয় বেশি।
এ বছর ৬৩০ হেক্টর জমিতে ফুল চাষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন পলাশ। তিনি বলেন, ‘আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফুলের উৎপাদন বেড়েছে। আমাদের আশা, এ বছর এই অঞ্চলে ফুল বিক্রি ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।’
এ বছর গদখালীতে ফুলের মেলা করায় বিক্রি আরও বেড়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘বসন্ত, ভালোবাসা আর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এই অঞ্চলের চাষিরা এবার ১০০ কোটি টাকা ফুল বিক্রি করতে পারবেন। কেননা এবারও টিউলিপ আর লিলিয়ামের মতো দামি ফুল ওই সময়ে বাজারে উঠবে। সেইসঙ্গে দাম ভালো পাবেন চাষিরা।’
Leave a Reply